অনামিকার ভাবনা - এক চল্লিশ (41)

বনগাঁ ও বেনাপোল

আমাদের ট্রেনটা নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই বনগাঁ স্টেশন এ থামলো। ইন্ডিয়ান রেলের সময় সচেতনতা দেখে খুব ভালো লাগলো। বনগাঁ নামটির যথার্থতা আছে। গাছ পালায় অন্ধকার হয়ে আছে, যেদিকে চোখ যায় শুধু শুধু সবুজ আর সবুজ। বলতে হবে শ্যামল সবুজ। গাছে গাছে পাখীর কিঁচির মিঁচির ডাকা ডাকিতে প্রাণ হারাবার উপক্রম। আমি বনগাঁ স্টেশন এর উরাল সেতুর উপর উঠে ছবি তুলতে শুরু করলাম। ঘন কুয়াশায় সেতু এবং সেতুর রেলিং এমনভাবে ভিজে আছে যে দেখে মনে হচ্ছে কেউ পানি ঢেলে ধুয়ে দিয়ে গেছে। ছবি তুললাম চারপাশের। তপু বেশ কিছুদূর এগিয়ে গিয়েছিল, আমাকে কোথাও না দেখতে পেয়ে তাড়া দেবার জন্য ফেরৎ এসেছে। বেনাপোলে পৌঁছাতে দেরী হলে সময় সংক্ষিপ্ততার সমস্যা হবে কারণ আঠারো জানুয়ারী রাতের মধ্যে আমাদেরকে অবশ্যই ঢাকা পৌঁছাতেই হবে।

পূর্বের কথানুযায়ী ঐতিহাসিক স্বাধীনতা যুদ্ধের যশোর রোড ধরে হাঁটতে হবে, বর্ডার পর্যন্ত যেতে হবে, বাংলাদেশের বেনাপোলে আমাদের জন্য যারা অপেক্ষা করবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা ইত্যাদি অনেক কাজ। এদিকে মুঠোফোন এর "নেই" হয়ে যাবার কারণে তপুর মানসিক চাপ বেশ উচ্চ মাত্রায় আছে। তবে আমাদের সাথে তেমন কোন জিনিসপত্র নেই। আমরা দু'জনই মালামাল টানাটানির বিপক্ষে, সেজন্য তেমন কিছু কিনিওনি। আমার হাতে একটি মাঝারি সাইজের পার্স, তপুর কাছে একটি পিঠের ব্যাগ। বর্ডার এ বেশী সময় লাগবার কথা নয় এমন ধারণা নিয়েই এগিয়ে চলেছি আমরা।

সময় বাঁচাবার জন্য আমরা দ্রুত হেঁটে গিয়ে একটা বেবী টেক্সি নিলাম। পথে কয়েক বার নেমে যশোর রোড এর কিছু ছবি তুললাম। মনে হচ্ছিল অজানা টেপ রেকর্ডারে বেজে চলেছে মৌসুমী ভৌমিক এর যশোর রোড গানটি। পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশের সাথে ভারতের সর্ববৃহৎ স্থল সীমান্ত বন্দর বেনাপোল। সময় যতটা লাগবে বলে ধারণা করেছিলাম তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লেগেছে। সীমান্তে কর্মরত জনবলের কর্মের প্রতি অনীহা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সময়ের মূল্যবোধ না থাকা এবং সর্বোপরি দায়িত্ববোধ এর অভাবের কারণে অযথা অপেক্ষার কষ্ট পেতে হয়েছে আমাদের।

সাড়ে এগারোটার দিকে পৌছে গেলাম কাঙ্খিত ঠিকানায়। নাসির এর সাথে সাথে দেখা হলো বেনাপোল নিউ মার্কেটে। নাসির আমাদের জাবির ছোট ভাই, বাইশ ব্যাচ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এবং থাকতো ভাসানী হলে। আমরা নাসিরকে দায়িত্ব দিয়ে ছিলাম একটি ভালো হোটেল এ বুকিং দিয়ে রাখতে। কারণ আমাদের ইচ্ছা ছিল জাবি ছাত্রছাত্রী যারা কাছাকাছি আছে বা থাকবে তাদের সবাইকে নিয়ে বৈকালিক আড্ডায় বসা। নাসির পর্যটনের রেস্ট হাউজ এ বুকিং দিয়ে রেখেছে। আমরা নাসিরের গাড়ী চড়েই পৌছে গেলাম সেখানে। ভিয়েনায় অবস্থানরত রুমীর ছোট ভাই বাবু, বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলো। অল্প সময়ের মধ্যে বাবুও চলে এলো রেস্ট হাউজ এ। নাসির এবং বাবু দু'জন আমাদের জন্য অনেক করেছে। অনেক ঘুরলাম, দেখলাম, খেলাম, বাবুদের বাড়িতে এবং নাসিরদের বাড়ীতে পারিবারিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম কিন্তু জাবির ভাই বোনদের সাথে (ফোন হারাবার কারণে) যোগাযোগ না হবার বিষয়টি পড়ে গেল অপূর্ণতার ঝুলিতে।

নাসরিন নাহীদ
সতেরো জানুয়ারী ২০২০
বেনাপোল থেকে

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - বিয়াল্লিশ (42)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - চল্লিশ (40)