অনামিকার ভাবনা - চল্লিশ (40)

আজ শুক্রবার ছেড়ে দেব কলকাতা শহর। ভোরে ঘুম থেকে উঠে তৈরী হচ্ছি। দুদিকের দু'টি মসজিদ থেকে ফজরের আযান শুনে খুব ভালো লাগলো। এতটা ভালো লাগার অন্যতম কারণ হচ্ছে NRC. মুসলিম বিরোধী যে আইনটি অনুমোদিত হবার কারণে প্রতিবাদী হয়ে পথে নেমেছিল ছাত্র জনতা এবং যে কারণে দীর্ঘ সময় ধরে মাথার মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছিল। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে ভ্রমণ এর বিষয়ে আপত্তিও করেছিল। কিন্তু কলকাতায় বিশেষ কোনো অস্থিরতা চোখে পড়েনি। আমরা সকাল সোয়া ছ'টার সময় হোটেল ছেড়ে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে রওয়ানা হলাম। সকাল সাতটা বারো মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা, যথাসময়ে ট্রেনটিও ছেড়ে দিল। স্টেশন এর পার্শবর্তী চায়ের দোকান থেকে চা নিয়ে এসে তপু বুঝতে পারলো তার মোবাইল ফোনটি খোয়া গেছে। বনগাঁ স্টেশন এ নেমে বাকি যোগাযোগ কিভাবে হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে এখন। ট্রেন দমদম বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করেছে। লোকাল ট্রেন,
সব স্টেশন এ থামছে কিন্তু চলছে দ্রুত গতিতে। স্টেশনে এবং গাড়ীতে ফেরিওয়ালাদের হাঁক ডাক, সব মিলিয়ে ভালোই লাগছে। তপু মুড়ালি কিনতে চেয়েছিল কিন্তু ভাংতি নেই বলে তাও হলো না।

বনগাঁ স্টেশন থেকে বেনাপোল বর্ডার পর্যন্ত আমরা অটোরিকশায় যাবো বলে ঠিক করেছি। কুড়ি মিনিট এর পথ। বর্ডার পেরোলেই রুমী ও মুক্তা ভাই এর বাড়ী। ছোট ভাই বাবু অনেকবার ফোন করেছে। আমাদের জাবির ছোট ভাই নাসির ও অপেক্ষা করবে। মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ সমস্যা কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের।

ট্রেনে বসে মাঠ প্রান্তর বাংলাদেশের মতোই লাগছে। ফসলের ক্ষেতে সরিষার প্রধান্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে বেশী। ফসলি জমিতে কলা, নারকেল, আম, সুপারি এবং কাঠ গাছের চাষের প্রচলন ও পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেক গুলো স্টেশন পাড় হয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ আগে হাবরা এবং সংহতি স্টেশন ছাড়লাম। দু'ঘন্টার যাত্রা পথে মাঠ প্রান্তরের কৃষি জমি দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের শাইখ সিরাজের মত একজন কৃষি বিপ্লবীর খুব প্রয়োজন এদেশে এবং অচিরেই নারী বান্ধব কৃষিতে সংশ্লিষ্ট হওয়া জরুরী নারীদের।

বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে এর সাথে কোন হিসাব মেলাতে চাচ্ছি না তবে কলকাতার অনেক নারীর ফুটপাথের উপরে দীবা নিশি যাপন সত্যিই দুঃখ জনক। কলকাতা শহরের বিভিন্ন অংশের বেশীর ভাগ এলাকা পায়ে হেঁটে দেখেছি। পথের দূরত্বানুযায়ী টানা রিক্সা, অটোরিকশা, বেবিট্যাক্সি, টমটম, বাস ও ট্রাম নিয়েছি বাহন হিসাবে। নিম্নবিত্ত কর্মক্ষম নারীরা যে বেশ দুর্দশাগ্রস্থ তা বুঝবার জন্য বিচার বিশেষণের প্রয়োজন হয় না। ছোট ছোট শিশু সন্তানদের নিয়ে দিনরাত কাটাচ্ছে ওরা ফুটপাথে।
কর্মক্ষম নারীরা পথেই হারিয়ে ফেলছে জীবনের মূল্যবান কর্মের সময় এবং শক্তিটুকু। কলকাতার নারী দুর্ভোগের আশু প্রতিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
ফিরছি বাংলাদেশে, মনের গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছে কলকাতার নারীদুর্ভোগের চিত্র !!!

নাসরিন নাহীদ
সতেরো জানুয়ারী ২০২০
বেনাপোল বর্ডার থেকে।

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - এক চল্লিশ (41)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - ঊনচল্লিশ (39)