SULTANA NASRIN NAHEED

আমার চিন্তা ও বিবেক খাটিয়ে পার করে দিয়েছি জীবনের বেশীর ভাগ অংশ বিদেশ বিভূঁই এ। ২০২০ সালে এসে মনে হচ্ছে কোন কিছুই ঠিক মতো করিনি বা করতে পারিনি। জীবনের প্রথম ছাব্বিশ বছর কেটে গেছে মা বাবার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে। কখনো কোন দায়িত্ব গ্রহণ তো দূরের কথা, দায়িত্ব পালন এর ক্ষেত্রেও ছিলাম না সম্পূর্ণ বিবেচক। তারপরও সুনাম কুড়িয়েছিলাম অনেক বেশী যার জন্য একটা অনুশোচনা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমার মা বাবার ভালো ভালো অসাধারণ গুণাবলির জন্য মানুষ আমাকে অকারণেই সম্মানিত করে। আর ঠিক এই কারণটির জন্যই আমি সামনাসামনি হতে চাইতাম না মানুষজদের।

সব সময়ই মনে হতো আমার যা করণীয় ছিল তার সামান্যতম অংশ আমি করতে পারিনি। পড়াশোনার নাম ভাঙিয়ে নিজেকে কক্ষাবদ্ধ করে শুধুমাত্র টেবিল চেয়ার দখল করে থেকেছি ইত্যাদি ইত্যাদি। মা বাবা চাইতেন আমাকে ডাক্তারি পড়াতে, আর আমিও বুঝতাম অনেক পড়তে হবে, তাই পড়তাম। পরবর্তীতে বুঝতে পেরেছিলাম পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাবার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করা কিংবা ভালো শিক্ষক এর কাছ থেকে বাড়তি সহযোগিতা নেয়ার বুদ্ধিটা খাটানো হয়নি। 

পরীক্ষা পাশ করবার লক্ষ্যে, বাংলায় "আমার জীবনের লক্ষ্য" এবং ইংরেজীতে "My aim in life" মুখস্ত করেছি। নির্ভুল যাতে হয় তার জন্য বহুবার না দেখে খাতায় লিখবার অভ্যেসটা চালু রেখেছি। কিন্তু নিজের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছানো তো দূরের কথা, কখনো অভীষ্ট লক্ষ্য স্থিরও  করতে পারিনি। গতানুগতিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই পার করে দিয়েছি জীবনের ছোট বড় বাঁকের নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলত কাগজে কলমে যৎসামান্য কিছু শিক্ষা অর্জিত হলেও ব্যবহারিক প্রয়োগের সুযোগ ছিল তার চেয়েও আরো বেশী নগণ্য। ।

নিজেকে আড়াল করে রাখার স্বভাবটা ছিল আমার ছোট বেলা থেকেই। এছাড়া ও আম্মার উপরে নির্ভরশীল ছিলাম খুব বেশী। আম্মা যেভাবে করতে বলতেন ঠিক সেভাবে করতে বা চলতেই বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করতাম। নিজে জেনেে কিংবা বুঝে পড়ালেখা না করায় বেশীর ভাগ পড়া লিখাই হতো পরীক্ষা বিষয়ে উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্যবিহীন। আমার আরো একটা সমস্যা ছিল যে, দীর্ঘ সময় একটা কাজ আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারতাম না। যে কোনো বিষয়ে আমি বেশী সময় স্থির থাকতে না পারার কারণে ফলাফল আশানুরূপ হতো না।

ছাত্রজীবনে শেষাংশে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ আখলাকুর রহমান স্যার এর তত্ত্বাবধানে Planning Commission এর একটি প্রজেক্ট এ কাজের মাধ্যমে শুরু করেছিলাম আমার কর্মজীবন। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থনীতি বিভাগের পারিভাষিকা হিসেবে সরাইল কলেজে যোগদান করেছিলাম। ঐ সময় উপলব্ধি করলাম শিক্ষকতার পেশা যেহেতু বেছে নিয়েছি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ না করলেই নয়। আমার খালাতো বোন জেবা আপার নিগূঢ় চেষ্টায় ভর্তি হলাম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৮৬ সালের ২রা অক্টোবর থেকে শুরু হলো ইউরোপে অবস্থান এবং অন্য ধরনের দ্বিমুখী জীবন। অর্থাৎ একসাথে ছাত্রজীবন এবং বৈবাহিক জীবন। উল্লেখ্য আমার বিয়ে হয়েছিল ১৯৮৬ সালের পহেলা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে। আমরা দু'জন একই সাথে হলাম সহপাঠী। কর্মজীবন শুরু করলাম একসাথে। আমাদের দুটি মেয়ে আসত্রা ও আদৃতা এবং ছেলে আরাফকে নিয়ে ব্যস্ত জীবন খুব দ্রুত কেটে গেল।

ছেলে মেয়েদের সহযোগিতায় মুঠোফোনের ফেবুতে অনেকের সাথে যোগাযোগ হলো। অনেকের লেখা পড়বার এবং মন্তব্য লিখবার সুযোগ হলো। একটি কথা না বললেই নয় যে, দীর্ঘদিন যাবৎ ডয়েচ ভাষাবাসীর দেশে থেকে বাংলা লিখতে গিয়ে কেমন যেন আটকে যাচ্ছিলাম। ভুল বানান থেকে শুরু করে সাধু ও চলতি ভাষার মিশ্রণের দোষটা কাটিয়ে উঠতে পারলাম না। ভুল ত্রুটি সম্বলিত, অগোছালো, সামঞ্জস্যহীন ছোট কোন একটি লিখার পাঠকদের উৎসাহে উৎসাহী হয়ে একে একে লিখা হয়ে গেছে অর্ধ শতাধিক পর্ব।

আমার ছেলে মেয়েরা ভালো বাংলা বলে কিন্তু বাংলা পড়তে তাদের কষ্ট হয়। তারপরও ওরা আমার লিখা পড়ে খুব খুশি হয়। আমার কাছে এ বিষয়টি খুবই উপভোগের এবং সন্তোষজনক। পাঠকদের কাছে অনন্ত কৃতজ্ঞতা। যাদের মন্তব্য পড়ে আমি উৎসাহিত হয়েছি তাদের সকলের নাম ধীরে ধীরে প্রকাশ করবো ইনশাল্লাহ্!