আমার বঙ্গবন্ধু পর্ব দুই (2)
আমার বঙ্গবন্ধু মহা মানব,
সকলের আশ্রয়স্থল, দুঃখী মানুষের প্রাণ।
দূরদর্শী পরিকল্পনাকারী মহান নেতা,
বাঙালীর প্রাণ প্রিয় জাতির পিতা।।
আজ ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ সাল। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরে আমরা স্বাধীনতার অপেক্ষা করতে করতে প্রায় আশা হারা হয়ে পড়েছিলাম। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পার করেছি কতগুলো মাস। আর যেন কিছুতেই চলছে না জীবন। কাটছে না সময়। আমার ছোট ফুপুর নাম বীণা। আমার আব্বার বিয়ের মাস দুয়েক আগে আমার বীণা টুপুরের জন্ম। আমাদের বয়সের পার্থক্য দু বছরের বেশি ছিল না বলে একসাথেই থাকতাম আমরা বেশির ভাগ সময়। একই স্কুলে কিছুদিন পড়েছিলাম এক ক্লাসে। পড়েছিলাম এ কারণে বলছি যে, আমাদের এলাকাটা যখন পাক হানাদার বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছিল তখন থেকে আমরা কেউ স্কুলে যেতাম না। সারাদিন ঘরের ভিতরে বই নিয়ে বসে থাকতাম কিংবা কিছু একটা করে সময় কাটাতাম ।
আম্মা আমাকে ঘর থেকে বের হতে দিতেন না। আমার ফুফু সব সময় আমার কাছে নানান খবর নিয়ে আসতো। আমি সব খবর সাথে সাথেই আম্মার কাছে গিয়ে বলতাম। আম্মা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে আমাকে বলতেন আল্লাহ্ আল্লাহ্ কর। আমার খুব অস্থির লাগতো। মৃত্যুর জন্য খারাপ লাগা কিংবা পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে অস্থির হওয়ার চেয়ে ও বেশী খারাপ লাগতো সার্বক্ষণিক আম্মার চোখের পানি দেখতে। এ যেন অসহনীয় এক কষ্ট।
সব সময়ের মতো বীণা ফুফু নতুন খবর নিয়ে এলো। আজই আমাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিবে হানাদাররা। আমি মূহুর্তেই বিস্মৃত হয়ে পড়লাম। হতভম্ব হয়ে পড়লাম। আব্বার জন্য মনের মধ্যে ঝড় বইতে লাগলো। আব্বার সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না। যুদ্ধ শেষে আব্বা আমাদেরকে না পেয়ে কি করবে? কোথায় যাবে? আমি কাঁদতে কাঁদতে এক দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে গেলাম আম্মার কাছে খবরটা জানাবার জন্য। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম মাটির চূলার সামনে ছোট একটা কাঠের পিঁড়িতে বসে আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার আম্মা।
নাসরিন নাহীদ
১০ ডিসেম্বর ২০১৯
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এর কয়েকটি ছবি।