অনামিকার ভাবনা - ছত্রিশ (36)

বিদায় মাদ্রিদ

আজ মাদ্রিদ থেকে বিদায় নিতে হবে আমাদের। গত ৩০ নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক কিছুই চিনে নিয়েছিলাম। মাদ্রিদে আমরা শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় পৌছে কফি Automat থেকে কফি বের করে নিয়েছিলাম আর আজ চায়ের কাপে চড়েই যেন মন পাখিটা উড়াল দিয়েছে সিলেটের চা বাগানে। মাদ্রিদে পৌছে প্রত্যেক দিনই খুঁজে পেয়েছি নতুন নতুন বাংলাদেশী খাবারের দোকান। বিশেষ করে Lavapies নামের এলাকাটিতে গেলে মনে হবে যেন বাংলাদেশেই অবস্থান করছি, যেমনটি মনে হয় লন্ডনের Whitechapel কিংবা রোমের Victoria তে গেলে।

যেহেতু মাদ্রিদে আজ আমাদের শেষ দিন সেহেতু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম কখন কোথায় যাব এবং কি কি কাজ করব। আমরা সকাল সাড়ে আটটায় হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম নাস্তা করার জন্য। যাব Lavapies এর বাংলা টাউন নামের বাংলাদেশী রেষ্টোরেন্টে। সিলেটের ভাইদের পরিবেশনায় খুব মজাদার চা যা উপভোগের জন্য হোটেল থেকে পাতাল রেলগাড়িতে চড়ে গেলাম এক স্টেশন পথের দূরত্বে। মাদ্রিদকে বলা হয় Nightlife এর শহর। শহরের অনেক বার এন্ড রেস্টুরেন্ট আছে যেগুলো সারা রাত খোলা থাকে। আলোকিত শহরের এসব Bar and Restaurant এ ভীড় থাকে ভোর পাঁচটা অবদি। আমরা যখন হোটেল থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম তখন মনে হচ্ছিল যেন সমস্ত শহর ঘুমিয়ে আছে শুধু আমরাই অসময়ের ভ্রমণ পিপাসু।

সকাল নয়টা থেকে শুরু হয় নাস্তা পরিবেশন। আমরা দুজন নয়টা বাজবার আগেই পৌছে যাবার কারণে একটু বসতে হলো। সকাল, দুপুর ও রাতে খেতে গিয়েছি বেশ কয়েকবার, যার ফলে সিলেটের ভাইদের সাথে ভালোই আলাপ পরিচয় হয়েছে। সিলেটি স্বাদের ঘন দুধের চা সাথে সিলেটি ভাষার সংমিশ্রণে মনে হচ্ছে যেন হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে আটলান্টিক মহাসাগরের দেশের এই বাংলা টাউন নামের রেস্টুরেন্ট টি নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে সুদূর সিলেটের চা বাগানে।

মাদ্রিদ শহরের বাকি অংশ যা কিছু এ কয়দিন দেখা হয়নি সেসব যায়গা ঘুরে দেখতে দেখতে সময় হয়ে এলো দুপুরের খাবারের। ফিরে গেলাম আমরা আবারও বাংলা টাউন রেস্টুরেন্টে। পরিচিত অনেকের সাথেই দেখা হলো। তাদের মধ্যে ভিয়েনার নাসিম ভাই ও গাজী ভাইকে পেয়ে আনন্দের মাত্রাটা বেড়ে গেল। খাবার শেষে বিদায় এর পালা। আমরা বিদায় নিলাম আমাদের মতো যারা ভ্রমণের জন্য এসেছে এবং এই রেস্টুরেন্ট যাদের সাথে বার বার দেখা হয়েছে তাদের সাথে। বিদায় নিলাম রেস্টুরেন্ট এ যারা আমাদেরকে আন্তরিকতার সাথে আপ্যায়ন করেছেন তাদের সাথে। বিদায় এর সময় কেমন যেন একটা মায়া অনুভূত হচ্ছিল যেন সুদূর সিলেট থেকেই বিদায় নিয়ে ফিরে যাচ্ছি নিজ গন্তব্যে।

নাসরিন নাহীদ
০৩/১২/২০১৯

Previous
Previous

আমার বঙ্গবন্ধু পর্ব এক (1)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - পঁয়ত্রিশ (35)