অনামিকার ভাবনা - পঁয়ত্রিশ (35)
স্পেন
হঠাৎ করেই স্পেনে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো আমাদের। আনুষাঙ্গিক গোছগাছ ও তৈরীতে যতটা সময় লাগবে সে বিষয়টির দিকে খেয়াল করেই টিকিট কেনা ও হোটেল বুকিং দেয়া হল। আমরা ৩০ নভেম্বর, ভোরে স্পেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।
আইবেরিয়ান দ্বীপের এই দেশটিতে মানুষ এর আগমন ঘটে ৩৫,০০০ বছর আগে। অনেক সমুদ্র বন্দর থাকবার কারণে বহুবার দেশটি চলে যায় অভিবাসীদের দখলে। ৫০ টি প্রদেশের এই দেশটিতে রয়েছে বহুজাতিক ইতিহাস। এমন স্বল্প পরিসরে এর সামান্যতম তথ্যও তুলে ধরা সম্ভব হবে বলে মনে করছি না। স্পেন ইউরোপের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। স্পেনের পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ও পর্তুগাল, উত্তরে ফ্রান্স ও আনদোরা, পূর্বের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণে জিবরাল্টা প্রণালী। উল্লেখ্য এই জিব্রাল্টা প্রণালীর ঐপারেই আফ্রিকার অবস্থান। ইউরোপের সাথে আফ্রিকার একটি মাত্র সীমান্ত দেশ হচ্ছে স্পেন।
স্পেনের আয়তন ৫,০৫,৯৯০ বর্গ কিলোমিটার। ২০১৮ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী স্পেনের লোকসংখ্যা ৪,৬৭,৩৩,০৩৮ জন। মাথাপিছু বাৎসরিক গড় আয় ২৯৯৬১ ডলার। আয়তনের দিক থেকে ইউরোপরে চতুর্থ বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এই স্পেন।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর অভিবাসন এর অস্তিত্বের কারণে স্পেনে বহুজাতিক ইতিহাসের এবং সংস্কৃতির অস্তিত্ব ও বিরাজমান। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে কেল্টীয় ও ফিনিসীয়রা এখানে বসতি স্থাপন করেছিল। তারপর এখানে আসে গ্রীক ও কার্থেজীয়রা। রোমানদের আগমন ঘটে তাদের পরে। রোমানদের পরে আসে জার্মানিরা এবং তারাও দেশটি দখল করে রাখে দীর্ঘ সময় ধরে। ৭০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে দেশটি চলে আসে মুসলিদের দখলে এবং মুসলিমদের কর্তৃত্ব বিরাজ করে ১৪৯২ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত। বলা যায় এ সময়ে দেশটির কৃষি, সেচ, ব্যবসা বানিজ্য, চিকিৎসা, গণিত ও দর্শন শাস্রের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।
১৫০০ শতাব্দীর শেষের দিকে স্পেনের নাবিকেরা আমেরিকা মহাদেশ আবিস্কার করে এবং প্রচুর রূপা স্পেনে এনে বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে স্পেনকে প্রতিষ্ঠিত করে। এ ছাড়াও ঐ সময়েই রাজবংশগুলির মধ্যে বিয়ের বিষয়টি কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনে।
স্পেন নামটিও পরিবর্তিত হয়েছে কয়েকবার। খ্রিস্টপূর্বে ফিনিসীয়রা এ দেশের নাম দিয়েছিল স্পান। যার অর্থ গোপন বা লুকানো। পরবর্তীতে দেশটিকে মানুষ হিসপানিয়া নামে জানাতো যে দেশটিকে বর্তমানে স্পেন বা এসপানিয়া বলা হয়। স্পেনের বিভিন্ন শহরে এখনো হিসপানিয়া নামের ব্যবহার দেখা যায়।
ইতিহাসের প্রমাণ সাপেক্ষে এক সময়ের উন্নত অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সভ্যতার এ দেশটি বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সাথে কোন মতেই যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। তারপরেও বলা যায় অতীতের সভ্যতার ঐতিহ্যের অসাধারণ ও বিস্ময়কর প্রমাণ নিয়ে আকর্ষিত করে যাচ্ছে সমগ্র বিশ্বের মানব সভ্যতাকে।
নাসরিন নাহীদ
পহেলা ডিসেম্বর ২০১৯