অনামিকার ভাবনা - বত্রিশ (32)

শাহ্ মোহম্মদ ফরহাদ
(পর্ব পাঁচ)

কাক ডাকা ভোর কিংবা ভোর বেলায় কাকের ডাক এমন জীবন বৈচিত্র্যের কথা প্রায় ভুলতেই বসেছি। ইউরোপের শীত প্রধান দেশ গুলি তে কদাচিৎ কাকের দেখা মিললেও ডাক তেমন একটা শোনা যায় না। সভ্য দেশে বসতি গেঢ়ে কাকেরা ও হয়ে গেছে মার্জিত। মাঝে মাঝে কবুতরের মেলের মধ্যে দু-একটি কাকের সান্নিধ্য মেলে কিন্তু সাহেবদের দেশের কাকগুলি ও সাহেবি কায়দায় ডাকাডাকি চেঁচামেচি বাদ দিয়ে ভদ্রভাবে হেলেদুলে ঘুরে বেড়ায় পায়রা বন্ধুদের সাথে।

আমি চৌরাস্তার মোড়ের একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় অর্থাৎ সেকেন্ড ফ্লোরে থাকি। বাড়ির পাশের বড় বড় গাছের ডাল পালারাও সন্নিবিষ্ট হয়ে থাকে আমার জানালার পাশ ঘেঁষে। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালি এসে গাছে বসে, বিশ্রাম নেয়, ফুল আর বীজ কিছু একটা খেয়ে আবার উড়ে যায়। মাঝে মাঝে কাক এসেও বসে এবং অন্যান্য পাখির মত কাকও উড়ে যায়। কাক কিন্তু অন্য পাখিদের মত কোন স্বরধ্বনি না তুলেই উড়ে যায়। মাঝে মাঝেই অবাক বিস্ময়ে এসব পর্যবক্ষেণ করি।

মে মাসের নয় তারিখ বৃহস্পতিবার চৌঠা রমজানের কথা। খুব ভোরে একটি কাক আমার জানালার সবচেয়ে কাছের ডালে বসে অস্থির স্বরে কা কা করে দুটি ডাক দিয়েই উড়ে গেল। আমার খুব অস্থির লাগতে শুরু করলো। দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে আবারও ভেসে অসলো ঐ কাকটির কা কা স্বরের আরো দুটি ডাক। আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই। কিন্তু তারপরও ভোর বেলায় কাকের ডাকে আমি কেমন যেন একটা অশনি সংকেত উপলব্ধি করলাম। আমি রীতিমতো কাঁপতে শুরু করলাম, শয্যা ছেড়ে উঠে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ভোরের আলো কেবলমাত্র ফুটে উঠছে। অন্ধকার ঠিক তখনো রয়েই গেছে। মূহুর্তেই আমার মনে পড়লো দু- তিনদিন আগে আমার ছোট বোন হলি আমাকে ফোন করে বলেছিল আম্মা এবং জেবা আপা(খালাতো বোন) ভোরের স্বপ্নে এসেছিল। হলিও খুব ভয়ার্ত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়েই আমাকে স্বপ্নের কথা জানিয়েছিল। আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। মুহূর্তেই আমার মন নামের স্যাটেলাইটা ঘুরে এলো দেশ বিদেশে অবস্থানরত সকল অসুস্থ এবং বয়োবৃদ্ধ আত্মীয় স্বজনদের দ্বার ঘুরে। কিন্তু কখনো একবারও মনে হয়নি যিনি আমার প্রাণের এত কাছের ছিলেন এমনকি পথের দূরত্বের দিক থেকেও যার বসবাস ছিল এত কাছে তাঁর কথা। আমি আমার husband তপন এর কাছে ফরহাদ ভাই এর শারীরিক অবস্থা জানতে চাইতাম নিয়মিত। এবার ও জানতে চাইলাম। উত্তর এলো আলহামদুলিল্লাহ্ আগের চেয়ে এখন ভালো। অস্বস্তি এবং দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলাম তখন।

ফরহাদ ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ২৭/০৪/২০১৯ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি করেই ভাবী সবাইকে জ্ঞাত করেছিলেন। আমি দেখতে যাইনি ফরহাদ ভাই এর স্বাস্থ্যগত কারণ বিবেচনা করেই। অগণিত ভক্তজন যারা একনজর দেখবার জন্য ভীড় করে হাসপাতালের দোর গোড়ায়। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছিল যে কোনো উপায়ে হউক না কেন একটি নজর যদি ঐ মুখদর্শনে সার্থক হতে পারে সে কারণে। ভাবীর তথ্যানুযায়ী জানলাম ৮. মে ভাইকে হাসপাতালের বর্তমান অবস্থানরত বিভাগ থেকে ছেড়ে দেবে। বাকি চিকিৎসা হবে অন্য সময়ে হাসপাতালের অন্য বিভাগে। আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম ভাই বাড়ি ফিরে এলে দেখা করতে যাব ইনশাল্লাহ্!

"চলবে"

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - তেত্রিশ (33)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - একত্রিশ (31)