অনামিকার ভাবনা - ত্রিশ (30)

শাহ্ মোহম্মদ ফরহাদ

(পর্ব তিন)


"বিদায়ী শাহ্ মোহম্মদ ফরহাদ"

অবিরাম ঝরছে বৃষ্টি। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বাতাসের বেগ ৩৮কিলোমিটার /ঘন্টা এ সমগতিতে বৃষ্টি থাকবার কারণে অনুভূত হচ্ছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। দাফননির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই পৌছে গেলাম আমরা কবরস্থানে। আমাদের আগেই পৌছে গেছেন অনেক। মানুষের ঢল নেমেছে কবরস্থানে এবং কবরস্থানের যাত্রা পথে। আমাদের লক্ষ্য ছিল মসজিদের ভেতরে বসার ঘরে বসব। কিন্তু ভীড়ের মধ্যে কিভাবে ঢুকবে ভেবে পেলাম না। আমি এবং মাওলানা মাসুমা ফারুক আল মাদানী ডানদিকে লাশবাহী গাড়িটির পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। এ কবরস্থান টি যদিও সবার পরিচিত তার পরও আমি কিছু তথ্য তুলে ধরছি। অস্ট্রিয়ান সরকার ২০০৮ সালের ৩. অক্টোবরে মুসলমান ধর্মানুসারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় ৩৪৫০০ বর্গমিটার এর একটি কবরস্থান। যে কবরস্থানটি অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার ২৩ নম্বর থানা লিজিং এ অবস্থিত। গ্রসমার্কতস্ট্রাসে 2a (Großmarktstraße 2a) ঠিকানাধীন এ কবরস্থানে রয়েছে ৪০০০ কবরের স্থান সহ দাফনকার্যের সার্বিক সুযোগ সুবিধা।

লাশগোসলের কাজ চলছে। গোসল ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারজানা ফরহাদ তিথি। ঘরের ভেতর থেকে গোসল এবং কাফনপরিধান কার্যসম্পাদন শেষের খবর পেয়েই তিথি অকুলকে ডেকে বললো যারা যারা শেষ বারের মত বিদায়ীকে এক নজর দেখতে চায় তারা যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে। উল্লেখ্য অকুল শাহ্ মোহম্মদ ফরহাদ ভাই এর শ্যালক তথা তিথির ছোট মামা। অকুলের ইশারাতেই খুব দ্রুত সারিবদ্ধ ভাবে এক লাইনে মানুষ ঢুকে অন্য লাইন ধরে বের হতে থাকলো একই দরজা দিয়ে। বলা বাহুল্য যে লাশ ধৌতঘরের দরজার প্রশস্ততা সাধারণ দরজার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও বলা হয়েছিল শুধুমাত্র পরিবারের মহিলা সদস্যাবৃন্দা ছাড়া অন্য মহিলারা ঢুকতে পারবে না, কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। যতটুকু সময় ছিল অনেক মানুষ ভিতরে ঢুকে এক নজর মৃতের মুখ দর্শন শেষে চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে আসছিল। অকুলের বৌ শাহী নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল শাহীন ও আরো কয়েক জন মহিলা। এরই মধ্যে লোকারন্য হয়ে গেছে কবরস্থানের আশপাশের সর্বত্র। বৃষ্টিতে ভিজছে সবাই। প্রচন্ড শীত এবং বেগবান হাওয়া এসব ধরনের বৈরীতাকে উপেক্ষা করে সবার নজর কফিনের দিকে।

মসজিদের ভেতরে একাধিক জামাতে পড়ানো হলো জোহরের নামাজ। দোয়া এবং আয়াত খচিত সবুজ চাদরে আচ্ছাদিত কফিন রাখা হলো বাইরে। অস্ট্রিয়ার ইসলামিক সেন্টার মসজিদের ইমাম ও খতিব শাইখ সালীম জানাজার নামাজ পড়াবেন। তাঁর সাথে ছিলেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম ও খতিব ডঃ ফারুক আল মাদানী, ইমাম ও খতিব গোলামুর রহমান ও অন্যান্য মসজিদের ইমাম ও খতিবগন। কাতারে কাতারে মানুষ দাড়িয়ে গেল জানাজার জন্য। বিভিন্ন দেশের, ভিন্ন জাতী ও ধর্মের মানুষ ও উপস্থিত ছিল বাংলাদেশীদের সাথে। উপর থেকে পড়ছে হিম শীতল বারি, চোখ থেকে ঝরছে উষ্ণ জল। মন বলছে হায়! বিদায়! চির বিদায়! জানাজা শেষে চির শয্যায় শায়িত হলেন আমাদের প্রাণের মানুষ। কবরস্থান থেকে বিদায় নিতে হলো আমাদেরকেও। ভাবতে ভাবতে ফিরছি যে, কবে আমার ডাক আসবে আর থেকে যেতে হবে এখানেই।

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - একত্রিশ (31)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - উনত্রিশ (29)