অনামিকার ভাবনা - চব্বিশ - (24)

ডোনাও খালের সেতু

আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ সিদ্ধান্তে ভিয়েনার এক নং পৌরসভার Schwedenplatz এর Donaukanal এর পাড়ে গিয়েছিলাম । যে জাহাজটি প্রতিদিনই ভ্রমণকারীদের নিয়ে Donau খাল ধরে Donau নদীপথে Bratislava যাতায়াত করে সে জাহাজটির আলোক সজ্জা দেখে এলাম । জাহাজ ঘাটের দু'পাশে রয়েছে ভাসমান রেস্টুরেন্ট । বড়দিন উপলক্ষে রেস্টুরেন্ট গুলি ও সেজেছে নানান ধরনের নানান বর্ণের আলোক সজ্জায়। আবহাওয়া ঘুরে বেড়ানোর অনুকূলে ছিল না । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া এবং শীত থাকার জন্য মনে হচ্ছিল যেন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে । প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে আমরা আলোক সজ্জা দেখতে যাই তুলনামূলক ভাবে ভালো আবহাওয়ায় । তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেড়ানোর জন্য যোগ হয়েছিল ভিন্ন মাত্রার অনুভূতি । বেশীর ভাগ ছবি তুলেছি Schwedenbrücke এর উপরে দাড়িয়ে ।

Schwedenplatz এবং Schwedenbrücke এর কয়েকটি বিষয়ের উপর যৎসামান্য আলোকপাত করছি । জার্মান ভাষায় সুইডেন এর নাম Schweden/শুভেডেন এবং Platz হচ্ছে স্থান বা জায়গা । এই Schwedenplatz টি ভিয়েনা শহরের একেবারে মধ্যখানে পড়েছে এবং এর নাম হচ্ছে Innerestadt (আভ্যন্তরীণ শহর) . Stadt শব্দের অর্থ হচ্ছে শহর । আর খালের অপর পাড়ের নাম Leopoldstadt. দুটি Stadt এর মাঝখান দিয়েই বয়ে চলেছে ডোনাও খাল। উল্লেখ্য যে , ভিয়েনা শহর কিন্তু অবিভক্ত একটি শহর ,এর কোনরকমের ভাগাভাগি নেই । Innerestadt বলতে শহরের কেন্দ্রস্থল বোঝানো হয়েছে । আর Leopoldstadt বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হয়েছে স্থান চিহ্নিতকরণের জন্য ।

খালটির দু'পাশ ঘেষে চলে গেছে দুটি রাস্তা। শহরের ভিতর দিকে যে রাস্তাটি গেছে সেটির নাম Franz Joseph Kai. খালের অপর পাড়ের রাস্তাটির নাম Obere Donaustrasse. Innerestadt (আভ্যন্তরীণ শহর) টি ছিল দেয়াল ঘেরা এবং এর মূল ফটকটি ছিল ডোনাওখালের পাড়ে । এই ফটক বা গেইটটির নাম ছিল Rotenturmtor. ডোনাও খালের এই পাড় দিয়েই মানুষ জলপথে এসে শহরে প্রবেশ করতো । ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত শহরের এই বেষ্টনী বা দেয়ালটি ছিল ।

১৫ শত শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত খালের
দু'পাড়ের সংযোগকারী কোন পুল/সেতু
ছিল না । ঐ শতাব্দীর মাঝামাঝিতেই একটি সেতু তৈরী করা হয় এবং নাম দেয়া হয় Schlagbrücke. তৎকালীন সময়ে এই Schlagbrücke (সেতু ) ছিল ডোনাওখালের উপর একমাত্র Brücke/সেতু ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইডেন অস্ট্রিয়ার পক্ষে যুদ্ধ সহযোগিতা করেছিল । এই কারণে Jakob Reumann ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই জায়গার নাম দেয় Schwedenplatz এবং Schlagbrücke টির নাম দেয় Schwedenbrücke .

Schwedenplatz নিয়ে অনেক কিছু বলার এবং জানার থাকলেও আমার আছে একটি বিশেষ স্মৃতি । আমি ১৯৮৬ সালে ভিয়েনায় আসি। ভিয়েনায় পৌছে প্রথমেই আমি উঠেছিলাম প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ উল্লাহ স্যার এর বাসায় । ভাবী ( মোহাম্মদ উল্লাহ) আমাকে এয়ারপোর্টে থেকে উনার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন । ভাবী এতো বেশী ভালো মানুষ যা বর্ণনা করার যোগ্যতা বা সামর্থ আমার নেই । ছুটির দিন গুলিতে ভাবী তাঁর দুই মেয়ে শর্মী ও সোমার সাথে আমাকেও বেড়াতে নিয়ে যেতেন। আমি ভাবীর কাছে থেকেই প্রথম জেনেছিলাম যে পাতাল রেলের U1ট্রেনটি Schwedenplatz এ ডোনাও খালের পানির পরবর্তী আরো নীচের স্তরের গভীর পাতাল দিয়ে যাতায়াত করে । ঐ সময়ে যখন আমাদের দেশে জরুরী সাঁকো ,সেতু এমনকি কালভার্টের ও ছিল অপর্যাপ্ততা। ঠিক তখন এদেশের রাস্তা, সেতু, যানবাহন - বলতে গেলে সবই অবাক করেছিল আমায়। আর দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশে ফেলে আসা মা - বাবা , ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন , বন্ধু-বান্ধবী সকলের জন্য ব্যথায় ভারাক্রান্ত হয়েছিল মনটা ।

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - পঁচিশ (25)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - তেইশ (23)