অনামিকার ভাবনা - তেইশ (23)

ওবেরলায় আমরা

প্রশান্তির সকাল । দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে শীতল হাওয়া বয়ে নিয়ে আসছে শীতের আগমনী বার্তা । সজোরেই বইছে প্রাণ জুড়ানো হাওয়া। এ হাওয়া যেন ডালপালা আর লতাগুল্ম গুলোকে এলোমেলো করতে পেরে আনন্দে আত্মহারা । কারোরই বুঝতে বাকি নেই যে এই হাওয়ার পালকিতে চড়েই অজানায় হারিয়ে যাবে বহুরূপী গ্রীষ্মকাল প্রায় অর্ধ বছরের জন্য ।

গ্রীষ্মকালটিকে সন্মানের সাথে বিদায় জানানোর পরিকল্পনা নিয়েই সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ করেই ওবেরলাপার্ক এ যাবার সিদ্ধান্ত হলো আমাদের। শারমিন, শিউলি, সুমি, হলি ও রীনা ভাবীর সাথে একমত হয়ে কয়েকটি পরিবার গুছিয়ে নিল সেপ্টেম্বরের তৃতীয় রবিবারটিকে। যাবার জন্য স্থান হিসাবে ওবেরলা পার্ক এর অভ্যন্তরীণ এলার্জি পার্কের নিকটস্থ পার্কটিই গুরুত্ব পেল ।

পরিকল্পনানুযায়ী আমরা সবাই সকাল এগারোটার উপস্থিত হলাম সেখানে যাতে দিনটিকে লম্বা সময় ধরে উপভোগ করা যায়। সবাই সাথে করে নিয়ে গেল নানান রকমের পিঠা, , পোলাও, খিচুড়ি, ভাত সাথে মাছ - মাংসের বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু রান্না আর নানান পদের ভর্তা এবং সামসুন্নাহার ভাবীর শুঁটকি মাছের ভর্তার কথা আমি উল্লেখ না করে পারছি না।

নোনা ইলিশ এর ভর্তা আমি জীবনে প্রথম খেলাম যা ছিল শাহিদা সেলিম ভাবীর অবদান । ঝাল-মিষ্টি অনেক ধরনের নাস্তার, আয়োজন শিউলি, শারমিন, শেফালী সহ সবাই মিলে । বিশেষ করে খেজুরের রসের লালি দিয়ে সুমির তৈরি পায়েশের কথা উল্লেখ্য না করলেই না ।

ওবেরলাপার্ক এর আশেপাশে বসতি অনেক বাঙালি পরিবারের। সবসময়ই যারা এই পার্কটির বিভিন্ন প্রান্তের সৌন্দর্য আস্বাদন করেন তারা চান আমাদের নিয়ে ওখানে বেড়াতে যেতে । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এবং সম্পদে ভরপুর এই পার্কটির সামান্য কিছু তথ্য তুলে ধরছি । তবে ওবেরলা পার্ক (Der Kurpark Oberlaa) সম্পর্কে এত অল্প পরিসরে তেমন কিছুই বলা সম্ভব নয়। এই পার্কটি ভিয়েনা শহরের দশ নম্বর থানায় অবস্থিত । যে থানাটির নাম Favoriten . রাজধানী শহরের মধ্যে এত বড় একটি পার্ক যা আমার মত একজন সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তোলে । পার্কটির আয়তন ৮৬০,০০০ বর্গমিটার( 860.000 m².), যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাগান, কয়েকটি জলাশয়, শিশু পার্ক ও সুবিন্যস্ত রাস্তাঘাট সহ বিনোদনের বহু মাত্রিক আয়োজন । এছাড়া ও বিভিন্ন ধরনের গবেষণার প্রাণকেন্দ্র এই পার্কটি ।

সারাদিন কাটিয়েছি আমরা গল্পে, আনন্দে আর উল্লাসে। বাচ্চারা খেলাধুলা এবং ছোটাছুটি করে হয়েছে ক্লান্ত। সব সময় যা হয় পুরুষদের তাসের আড্ডার পাশাপাশি রাজনীতির চর্চা । মহিলাদের লুডু খেলায় গুটি কাটার ধূম আর হাসাহাসি । কেউ গুটি কেটেছে, কারোর গুটি কাটা গেছে আর হাসতে হাসতে আমাদের হয়েছে প্রাণান্ত অবস্থা ।

ঘরে ফেরার সময় হলো । এবার বিদায় নেবার পালা । গ্রীষ্মকালটিকে বিদায় দিতে এসে নিজের বিদায় এর কথাই মনে পড়েছে বার বার । ফেরার পথে গাছের পাতা ঝরা দেখে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল রবিঠাকুরের গানের সেই চিরন্তন বাণী:-
"ঝরা পাতা গো, ঝরা পাতা গো
আমি তোমারি দলে ।"

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - চব্বিশ - (24)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - তেইশ (23.1)