অনামিকার ভাবনা - তেইশ (23.1)

গ্রীনলাইন

সাইপ্রাস নয় হাজার দুই শত একান্ন বর্গ কিলোমিটারের একটি দেশ। তার মধ্যে রয়েছে দুটি ধর্মের দুটি অংশ যা আমি আগের পর্বগুলিতে উল্লেখ করেছি। তুরস্ক তথা মুসলমানদের অংশের আয়তন তিন হাজার তিন শত পঞ্চান্ন বর্গকিলোমিটার এবং দক্ষিণাংশ তথা গ্রিসের খৃষ্টানদের অংশের আয়তন পঁচহাজার আটশো ছিয়নব্বই বর্গকিলোমিটার । উত্তর সাইপ্রাস এর তুলনায় দক্ষিণ সাইপ্রাস আড়াই গুণেরও বেশী বড়। দুটি অংশই আলাদারাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

এগারো লক্ষ সত্তর হাজার জনসংখ্যার সমুদ্রঘেরা এই দেশটিতে ভূখণ্ড, ভূসম্পদ আর ধর্মীয় অনুভূতির কারণে নয়শত বছরের বেশি সময় ধরে সংগঠিত হয়ে আসছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন। যুদ্ধু শেষ হয়েছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে । বর্তমানে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে Greenline প্রতিষ্ঠা এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চলছে স্বাভাবিক ভাবেই ।

তুরস্ক এবং গ্রীস অধিবাসীদের দাঙ্গা নিরসনের তাগিদে দ্বীপটির পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত স্থাপন করা হয় Pufferzone/ Greenline. যে লাইনটি স্থান বিশেষে 50 মিটার থেকে 100 মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত এবং 90 কিলোমিটার দীর্ঘ । অন্যদিকে সম্পূর্ণ দ্বীপটি 225 কিলোমিটার দীর্ঘ ও 90 কিলোমিটার প্রশস্ত । রাজধানী শহর নিকোসিয়ার প্রধান সড়কটির উপরেই বসানো হয়েছে চেক পোষ্ট। শুধুমাত্র চেক পোষ্ট পাড় হয়ে গেলেই মানুষ চলে যাচ্ছে উত্তর সাইপ্রাস থেকে দক্ষিণ সাইপ্রাস এ। আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শুধু পাসপোর্ট কনট্রোল করা হয় । তার জন্য নেই কোন বাড়তি খরচ বা ভিসার ঝামেলা। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যায় । চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে কনট্রোল অফিস । সারাক্ষণই চলছে মানুষের যাওয়া আর আসা।

বার্লিন এর প্রাচীর যেমন পূর্ব জার্মান এবং পশ্চিম জার্মানকে বিভক্ত করে রেখেছিল ঠিক তেমনি উত্তর সাইপ্রাস এবং দক্ষিণ সাইপ্রাসকে আলাদা করে রেখেছে গ্রীনলাইন । আসা যাওয়ার পথে রয়েছে পাসপোর্ট কনট্রোল এর পাশাপাশি রয়েছে ছবি তোলা এবং VDO করার মত কিছু প্রাসঙ্গিক নিষেধাজ্ঞা । রাস্তায় দু'পাশে দুটি বাড়িতে চলে বর্ডার এর যাবতীয় কাজ। একটা বাড়ি পার হলেই পৌছে যাওয়া যায় অন্য একটা দেশে। তবে বর্ডার বলে কথা যতক্ষণ পর্যন্ত বর্ডার বা গ্রীনলাইন এর এক অংশ থেকে অন্য অংশে যাবার কাজটি শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্তই থাকে একটা বাড়তি চিন্তা ।

আমার ভাবনা হচ্ছে নানান আঙ্গিক থেকে সাইপ্রাস এর জন্য । ভাবনা হচ্ছে উনিশশত সাতচল্লিশ (1947) সালের আগস্ট থেকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান এর বিভক্তি ও বর্ডার সমস্যা বিষয়ে । বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পরে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের বর্ডার এর স্থায়ী সমস্যা নিয়ে, যদিও ইন্ডিয়া বাংলাদেশের
বর্ডার এর কিছু কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে । কিন্তু কিছু কিছু স্থায়ী সমস্যা আছে যে সমস্যার সমাধান কোন কালেই হবার নয়।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে সমুদ্রবেষ্টিত দেশটি দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে না জানি কখন কোন সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে দেশটি আবার, শুরু হয়ে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। সাইপ্রাস এর সীমানা নির্ধারণের গ্রীনলাইন বা বাফার জোনটিকে আমার কাছে মনে হয়েছে একটি ক্ষণস্থায়ী দুর্বল সেতুর মত। কোনরকমের বাড়তি চাপ সাইবার ক্ষমতার যেন নেই সেতুটির। আমাদের এ পৃথিবীতে ভূখণ্ড, ভূসম্পদ আর ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে কত ভাগাভাগি হয়েছে এবং আরো যে কত ভাগাভাগি হবে তা শুধু মহান আল্লাহ্ পাকই ভাল জানেন । মহান আল্লাহ্তায়ালার কাছে প্রার্থনাঃ দেশ নয়, জাতি নয়, এমনকি সম্পদ ও নয়, বরং আসমান জমিনের সকল নিরাপত্তা যেন সুমহানআল্লাহ্ পাক নিজ গুনেই দান করেন।

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - তেইশ (23)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - একুশ (21)