অনামিকার ভাবনা - বাইশ (22)

সাইপ্রাস এর EU তে অন্তর্ভুক্তি

সাইপ্রাস (Cyprus/Zypern) ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সুপরিচিত এবং অতি প্রাচীন একটি দ্বীপ । পাথরের যুগ থেকেই এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে । নয়শত(900) খৃষ্টাব্দ থেকে সিরিয়ানদের আগমন ঘটে এ দ্বীপটিতে। মূলত তামার ব্যবসার জন্যই তাদের আগমন ঘটেছিল এই দ্বীপে । এরপরে দ্বীপটি চলে যায় রোমানদের দখলে এবং বারোশো শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত রোমানদের দখলেই থেকে যায় সাইপ্রাস।

ক্ষমতার হাত বদল হয় বারবার । পরবর্তীতে ইতালির গেনুয়া এবং ভেনেডিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় দ্বীপটি । তবে গেনুয়া তেমন একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে না । যে কারণে পনরশত একাত্তর (1571) সাল পর্যন্ত দ্বীপটির মালিকানা থাকে ভেনেডিক রিপাবলিক এর হাতে। পনরশত একাত্তর (1571) খৃষ্টাব্দ থেকে আঠারশত আটাত্তর (1878) খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত দ্বীপটি থাকে ওসমানী সামরিক জান্তার দখলে । আঠারশত সাতাত্তর (1877) খৃষ্টাব্দে যখন রাশিয়ার সাথে তুরস্কের যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখন তুরস্ক তৎকালীন বৃটিশ সরকারের সাথে একটি রাজনৈতিক চুক্তি করে। চুক্তিটির উদ্দেশ্যে ছিল দ্বীপটির বিনিময়ে যুদ্ধ সহযোগিতা গ্রহণ । সেই সময় থেকেই দ্বীপটি চলে যায় বৃটিশদের হাতে।

মতানৈক্য দেখা দেয় চুক্তির ক্ষেত্রে । বৃটিশ - তুরস্ক চুক্তির বিরোধিতা করতে থাকে গ্রীস শুরু থেকেই । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে চরম পর্যায়ে পৌঁছায় এ বিরোধিতা। দাঙ্গা চলে দীর্ঘ সময় ধরে । শেষপর্যন্ত উনিশশত ষাট (1960) সালে সাইপ্রাস দ্বীপটি বৃটিশদের কর্তৃত্ব থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে ।

সাইপ্রাস এর উত্তর অংশ মুসলিম অধ্যুষিত এবং দক্ষিণ অংশ খৃষ্টান অধ্যুষিত । বৃটিশদের কর্তৃত্ব থেকে দেশটি রক্ষা পেলেও
তুরকিশদের এবং গ্রীখিশদের অভ্যন্তরীণ দাঙ্গার কোন নিরসন হয় না । একারণে উনিশশো চুয়াত্তর (1974) সালে জাতীসংঘ সৈন্য মোতায়েন করে সাইপ্রাস এ। ঠিক ঐ সময়ে তুরস্ক "তুরকিশ ভাষাভাষী" জনগণের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে উত্তর সাইপ্রাস দখল করে নেয় । জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ দখলের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে । পরবর্তীতে উনিশশত চুয়াত্তর (1974) সালে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং Greenline প্রতিষ্ঠিত হয়। এই Greenline নিয়ন্ত্রণ এর দায়িত্ব থাকে জাতিসংঘের সৈন্যদের উপরে যা আজও বলবৎ আছে ।

উনিশশত তিরাশি (1983) সালে তুরস্ক তাদের দখলকৃত উত্তর সাইপ্রাস অংশটিকে তুরস্কের ভূখণ্ড হিসাবে ঘোষণা দেয় । কিন্তু জাতীসংঘ উক্ত ঘোষণার ও বিরোধিতা করে । দুই হাজার চার (2004) সালে সাইপ্রাস দ্বীপটি তে তুরস্ক অংশ এবং গ্রীস অংশ পুনরায় একত্রিত করার লক্ষ্যে হ্যাঁ/না ভোট হয়ে যায় । সেক্ষেত্রে গ্রীস অংশের জনগণ অর্থাৎ দক্ষিণ সাইপ্রাস জনগণ দুই সাইপ্রাস একত্রিত করার ব্যাপারে না ভোট দিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ সাইপ্রাস স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সদস্যপদ প্রাপ্ত হয়। উত্তর সাইপ্রাস রয়ে যায় তুরস্কের অংশ হিসাবে । বলা বাহুল্য দক্ষিণ সাইপ্রাস স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হবার সুযোগ পেলেও রয়ে যায় Schengen এর বাইরে । অন্যদিকে উত্তর সাইপ্রাস তুরস্কের অংশ হিসাবে রয়ে যায় তুরস্কের সাথে যার অন্তর্ভূক্তি হয়না ইউরোপীয় ইউনিয়নে কিংবা শেংগেন (Schengen) এ।

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - একুশ (21)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - কুড়ি (20)