অনামিকার ভাবনা - উনিশ (19)

ফুল-পাতা, গাছ-গাছালি নিয়ে গুণিজনেরা অনেক কথাই বলেছেন, লিখেছেন গল্প কবিতায়। আমি তেমন সুন্দর করে গুছিয়ে প্রকাশের যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনটাই রাখিনা। গাছ, ফুল,ফল ও পাতা আমাকে ভীষনভাবে আকর্ষন করে। ঘাস, লতা, পাতা আর পানিতে ভাসমান ফুল পাতার আকর্ষণে আমি সবসময়ই মোহিত। আমাদের ব্রাহ্মনবাড়ীয়ায় বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে যেমন রয়েছে হলদে সরিষা ফুলের আশার বাণী আর বিলাসিতা, ঠিক তেমনি জলাভূমিতে রয়েছে মিশ্রিত বেগুনী রঙের চোখ জুড়ানো আর মন ভোলানো অন্যরকমের এক গভীর প্রশান্তি। বিশেষ করে ছেলেবেলায় যখন আমরা রেলগাড়ীতে চড়ে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া থেকে আমাদের নানার বাড়ী ভাতশালায় পর্যন্ত যেতাম, তখনকার সেই অবিস্মরনীয় দৃশ্য আমার মনে-স্মৃতিতে বাসা বেঁধে এমনভাবে স্থায়িত্ব লাভ করেছে যে আমি যেখানেই যাই না কেন আমার মন শুধু খুঁজে ফিরে সেই শোভা আর সেই প্রশান্তির দৃশ্য গুলোকে।

আমরা যে বাড়ীটিতে থাকি সেটির ডানদিক থেকে কয়েকটি বাড়ী পার হলেই একটি পার্ক এবং বা'দিকে গেলেও আর একটি পার্ক। ঘর থেকে বের হয়ে আমি বেশির ভাগ ডান দিক দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্য স্থলে যাই। ডান দিকের পার্কটির নাম মাইজেল পার্ক। এ পার্কটির সাথে আমার সান্নিধ্য বহু বছরের। ছেলে মেয়েরা যখন ছোট ছিল তখন যেতাম তাদের খেলাধূলার জন্য। থাকতাম সারাটা বিকাল। বাচ্চারা যখন খেলত তখন ওদের দিকে নজর রাখার পাশাপাশি নজর পরত গিয়ে কয়েকটি বিশেষ গাছের দিকে। আমি আজো যাতায়তের পথে তাকিয়ে থাকি সেই গাছগুলোর দিকে, হাটি ধীর পদে তাকাই স্মৃতি বিজরিত আঁখিতে।

নজর কাড়া সাদা চেরী ফুলের গাছটি সতেজ হয়ে উঠেছিল মাত্র কিছুদিন আগে। সূর্যের আলো আর উত্তাপে প্রাণ পেয়েছিল গাছগুলো। পুষ্ট হয়ে উঠেছিল শাখা প্রশাখা। অতি দ্রুত দেখা দিয়েছিল পত্রবিহীন শাখা প্রশাখায় সাদা ফুল। ফুল ফুটতে শুরু করেছিল সাত/আট এপ্রিল থেকে। আমি প্রতিদিনই একটি করে ছবি তুলে রাখতাম। সাদা সাদা ফুলে ভরে গিয়েছিল গাছটি। রোদের আলোতে পত্রবিহীন গাছ ভর্তি ফুল আর ফুল চকচক করতো। দেখে মনে হতো আলো আর হাওয়ার সাথে মেতে উঠেছে ফুলগুলো হারিয়ে যাবার খেলায়।

পহেলা বৈশাখের দিনে তাপমাত্রা বাড়ার
সাথে হাওয়া বইছিল সজোরে হাওয়া। আর হাওয়ার সাথে উড়ে উড়ে যাচ্ছিল ফুলের পাপড়ি। ওরা যেন হাওয়ার সাথে খেলায় হেরে গিয়ে লুটিয়ে পড়ছিল চারিধারে। রাস্তায়, পার্কে, আমার উপরে
সর্বত্র। পাপড়ির আদরে উল্লাসিত হবার কথা তা হয়েছি ঠিকই কিন্ত ব্যথিত ও হয়েছি তাদের বিদায়ের আভাস পেয়ে।
পরের দিন গিয়ে দেখলাম পাপড়িবিহীন ফুলগুলো নিয়ে মর্মপীড়াদায়ক অবস্থান নিয়ে গাছটি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি প্রতিদিনের মত আবারো ছবি তুললাম।
ব্যাথাকাতুর মনটা নিয়ে ভাবলাম
"হায়রে ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব! "

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - কুড়ি (20)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - আঠারো (18)