আনামিকার ভাবনা - সতের (17)

দেশ বিদেশে মেলার খাবার

পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে একত্র হয়ে মেলায় যাবার আনন্দটাই অন্য রকম
আমেজের। ঘুরে ঘুরে মেলা দেখার পাশাপাশি কখনো ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলা কিংবা তাদের আবদার মিটাতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া, কখনো বা বড়দের সাথে গল্পে মেতে থেকে কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়া কিংবা পিছিয়ে পড়া, এ যেন মেলা দেখার একটা সাধারন বৈশিষ্ট।
পাশাপাশি খাবারের দোকানগুলো দেখে এবং নানান ধরনের দৃষ্টিনন্দন ও মুখরোচক খাবারের সুবাসে ভরপেটেও ক্ষুধার সঞ্চার হয়। তারও আগে অনুভূত হয় পানীয় পানের তৃষ্ণা।

মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা হওয়ার সাথে সাথেই কি খাওয়া হবে সে চিন্তাটা চলে আসে সব কিছুর আগে। দেশের মেলায় গেলে আমরা বাদাম ভাজা, ঝাল মুড়ি, চানাচুর, বাদামটানা ইত্যাদি খেয়ে থাকি। এদেশে আমরা এই জাতীয় খাবার হিসাবে মারোনী ভাজা, গোল আলু ভাজা বা পোড়া, পপকর্ন বা ভূট্টার খই ইত্যাদি পেয়ে থাকি। এছাড়াও আমাদের খুব প্রিয় খাবার হচ্ছে লাংগোস। পোড়া আলু, পোড়া ভূট্টার ছড়ি কিংবা পপকর্ন বা ভূট্টার খই সবার পরিচিত হলেও মারোনি এবং লাংগোস একটু অপরিচিত বা আলাদা। মারোনী দেখতে কিছুটা পানি ফলের মত। ভাজা মারোনী খেতে কাঁঠাল বিচি ভাজার মত। আর লাংগোস হচ্ছে আলুর তৈরী বড় সাইজের লুচির মত। লুচি আলু দিয়ে তৈরী করলে যা হবে অনেকটাই সেরকম। তুষার ধবল প্রাকৃতিক রূপের কনকনে শীতে গরম গরম মারোনী ভাজা, পোড়া আলু এবং লাংগোস অসাধারণ খাবার। আমাদের পরিবারের সবারই খুব পছন্দের। প্রকৃত পক্ষে এ খাবারগুলো দেশি বিদেশী সকলেরই খুব পছন্দের।

মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। দু'হাজার সতের সালের মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের দোকানের সংখ্যা ছিল একশত চুয়ান্নটি।
এক্ষেত্রে হওয়াই মিঠাই এর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। কত বর্ণের,কত ধরনের হওয়াই মিঠাই যে এ দেশে পাওয়া যায় তা নীচের প্রদত্ত ছবি দেখলেই অনুধাবন করা যাবে। তবে সবই সুন্দরভাবে সংরক্ষিত এবং সাজানো।আমাদের দেশের মেলায় পানীয় হিসাবে পাওয়া যায় ডাবের পানি, আঁখের রস, ঘোল, লাচ্ছি, তুকমার সরবত, বেলের সরবত,তরমুজের সরবত ইত্যাদি। এদেশের মেলায় কত রকমের ফলের রস, চা, ও কফি পাওয়া যায় তা আমার পক্ষে এহেন স্বল্প পরিসরে বর্ণণা করা সম্ভব নয়। তবে দেশী-বিদেশী সকলের মনকাড়া এবং প্রাণহারা পানীয়টির নাম
Punsch. যার ভীষন ভক্ত আমাদের ছেলেমেয়েরাও। Punsch এক ধরনের গরম চা। অতিরিক্ত চিনি এবং মদ থাকে এতে। যে কারণে আমরা সবাই বাচ্চাদের
Punsch কিনে পান করি যা মদমুক্ত। Punsch এ পাঁচটি উপকরণের মধ্যে একটি হচ্ছে লেবুর রস। তবে লেবুর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় নানান রকমের ফলের রস। পছন্দমত ফলের রসের কথা বলে দিলে সেভাবেই পরিবেশন করে ওরা। পরিবেশনেও রয়েছে বিশেষত্ব, রয়েছে নির্ধারিত পাত্র। নিম্নে ছবি আছে। Punsch কেনার সময় পাত্রটির দাম ও রেখে দেয়া হয়। Punsch এর পাত্রটি ফেরৎ দেয়ার সাথে সাথে পাত্রের পয়সাও ফেরৎ দিয়ে দেয়।

Punsch (Hindi पांच pāñč) শব্দটির অর্থ পঁঞ্চ বা পাঁচ সংখ্যার সমষ্টি। শব্দটি শুনলেই বুঝা যায় শব্দটি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের। তাহলে সন্দহ নেই পানীয়টিও আমাদের অঞ্চলের। এই Punsch আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেই এসেছে। চা পাতা, লেবু, মসলা, চিনি ও আর্রাক নামের মদ এই পাঁচটি উপকরণ মিশানো হয় পানির সাথে। অত্যন্ত জনপ্রিয় Punsch নামের চা ভারতবর্ষ থেকে এসে নিজ গুনেই জায়গা করে নিয়েছে বিদেশে এবং বিদেশীদের মনে প্রাণে। বিদেশীরাও মায়া, মমতা আর মোহ দিয়ে আগলে রেখেছে Punsch চা কে। আর যাই হউক না কেন হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসা অতিথি বলে কথা!

Previous
Previous

অনামিকার ভাবনা - আঠারো (18)

Next
Next

অনামিকার ভাবনা - ষোল (16)